‘ঈশ্বরের বাক্যে রূপান্তর’ শিরোনামে ৬-১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে কুমিল্লায় একটি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত ওয়ার্কশপে ৯০ জন যুবক যুবতী দেশের বিভিন্ন অঞ্চরের চার্চ থেকে যোগদান করেন।
ওয়ার্কশপের মূল বিষয় ছিল সকলকে যীশু খ্রীষ্টের আদর্শ শিষ্য হিসেবে প্রস্তুত করা। মোট ৯টি মূল সেশনের মাধ্যমে শিক্ষকবৃন্দ সেই চেষ্টাই করেছেন। তবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পবিত্রআত্মার বিশেষ পরিচালনা ছিল। তারা সকলেই একটা বিশেষ উদ্দিপনা লাভ করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস।
৩ দিনের এই ওয়ার্কশপে একদিন সকল অংশগ্রহণকারী দুপুর পর্যন্ত রোজা রেখেছে ও প্রার্থনায় নিরব সময় কাটিয়েছে। প্রার্থনায় নীরব সময়ে অনেকেই ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার বিশেষ পরিচালনা ও দর্শন লাভ করেছে। নীচে একটি গল্প শেয়ার করা হলো-
মি. সরকার.
আমি খৃস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, যদিও আমার পিতা এবং দাদা মুসলমান ছিলেন তারা আমার জন্মের অনেক আগে থেকেই যীশুকে গ্রহণ করেছিলেন। দু’বছর আগে আমি খুব ভালো গ্রেড নিয়ে এইচএসসি পাস করেছি। আমার পরিবারের সকলের স্বপ্ন হলো আমি ডাক্তার হব।
টানা দু’বছর আমি মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি, কিন্তু দেশের কোনও মেডিকেল কলেজে প্রবেশের সুযোগ পাইনি। মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে আমার বিদেশে পড়াশোনা করার কিছু সুযোগও থেমে গেল। সুতরাং, আমি খুব নিরুৎসাহিত এবং হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।
লকডাউনের সময় আমি খুব বেশী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হয়ে গেলাম। সেসবের কিছু গ্রুপে আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কিছু মতামত লিখতে থাকলাম। আমার সেসব লেখা খুবই জনপ্রিয় হলো। আমি আরো উৎসাহ পেলাম। প্রচুর গবেষণা করে আমি ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে নানা রকম লেখা লিখতে থাকলাম। আসলেই আমি ঈশ্বর নামক বিষয়ে বেশ বিরক্ত হয়ে উঠলাম। অন্যদিকে আমার বর্তমান পরিস্থির কারণে নিজের উপর খুবই বিরক্ত হয়ে গেলাম। আমার এই অবস্থা দেখে মাঝে মাঝে যখন বাবা আমাকে প্রার্থনা করতে বলতেন তখন আমি রাগ করতাম এবং বাবার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করতাম।
এই অবস্থাতেই আমি বাংলাদেশ ডাকযোগে বাইবেল স্কুলের একটি ওয়ার্কশপে যোগ দিলাম। সেই ওয়ার্কশপে এক সকালে আমাদের সকলকে কিছু সময় দেওয়া হলো ব্যক্তিগত ভাবে নীরবে প্রার্থনা করে ঈশ্বরের কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য। আমার কাছে যা খুবই হাস্যকর একটা ব্যাপার ছিল। আমি জানতাম যে আমি এটা করতে পারব না। তারপরেও খেলাচ্ছলে আমি গেলাম। আমি জানতাম যে আমি কিছুই করব না। শুধু বসে থাকব। আমি তা-ই করলাম। কিন্তু হঠাৎ আমি ভাবলাম, আচ্ছা দেখি তো কিছু আসলেই পাওয়া যায় কি না! আমি চোখ বন্ধ করলাম। প্রায় ৯ মাস পর আমি আসলে প্রভু বলে কাউকে ডাকলাম। ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে তা প্রমাণ করার জন্য আসলে আমি কিছু জানতে চাইলাম। আমার ধ্যানের সময়টি খুবই কঠিন ছিল। আমি ঘেমে গেলাম ও আমার শরীর কেঁপে উঠল।
কিন্তু আশ্চর্যরূপে প্রভু আমাকে সত্যিই কিছু দেখালেন। আমি কিছু চিহ্ন দেখছিলাম! আমি দেখলাম যে আমার সামনে একটা বাইবেল আছে। কিন্তু বাইবেলের ভেতরের পাতাগুলো নেই। অর্থাৎ শুধু কভার আছে। আমি যা দেখছি তা নিশ্চিতভাবে আবার দেখতে চাইলাম। আমি একই বিষয় দেখলাম। আমার শরীরে ঘাম ঝরছে। এই দর্শনের মাধ্যমে আমি বুঝতে পারলাম যে, যদিও আমি একটি খ্রিষ্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি কিন্তু আমার ভেতরে ঈশ্বরের বাক্য নেই। তা হারিয়ে গেছে। আমি অনুতপ্ত হলাম ও যীশুর মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাইলাম। আমি এই প্রতিজ্ঞা করলাম যে আমি আর কখনোই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাব না।
আমাকে এমন রূপান্তরের সুযোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ডাকযোগে বাইবেল স্কুলকে ধন্যবাদ।
[ওয়ার্কশপ শেষে তিনি বাড়িতে ফিরে গেলেন। সেই সপ্তাহেই তিনি বিদেশে অধ্যয়নের বিষয়ে ৩টি প্রতিষ্ঠান ও দেশ থেকে বৃত্তির সুযোগ পেয়েছেন। ঈশ্বরের গৌরব হোক! বর্তমান তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় আছেন।]
সেই ওয়ার্কশপ থেকে এমন অনেক গল্প আছে। ঈশ্বরের গৌরব হোক।